কিংশুক সন্ন্যাসী
প্রায় তিন মাস ধরে মণিপুর জ্বলছে। মেইতেই ও কুকি জনজাতিদের মধ্যে এই হিংসা ও অশান্তির আগুন সমগ্র রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘর পুড়েছে হাজারের বেশি। প্রায় ৬০ হাজার অধিবাসী গৃহহীন হয়েছে। তারা পাশের রাজ্যে রিফিউজি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। মণিপুরে যেন সিভিল ওয়ার চলছে। ১৬০ জন নাগরিক হিংসার বলি হয়েছে। ৩০০ বেশি মানুষ আহত। অনেক এমএলএ-র ও বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ, প্যারা মিলিটারি, আর্মি থাকা সত্ত্বেও এই দুর্বিষহ অপঘটনাকে আটকানো যায়নি। পুলিশের কাছ থেকে রাইফেল, বন্দুক কেড়ে নিয়েছে জনতা। অলিম্পিক মেডেল জয়ী মেরী কম বলছেন, ‘আমার রাজ্য আজ জ্বলছে।’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন এই আন্দোলন-হিংসা বদ্ধ করা হোক। প্রাক্তন জেনারেল নিশিকান্ত সিং বলেন, ‘মণিপুরে অবস্থা সিরিয়া, লিবিয়া, নাইজেরিয়ার মত। রাজ্য এখন শাসনহীন ( Stateless)।’
ব্যাকগ্রাউণ্ড
ফেব্রুয়ারি ২০২৩ থেকেই মণিপুরের পাহাড়ী এলাকাগুলিতে বন ও বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষিত জমিতে অধিবাসিদের উচ্ছেদ শুরু হয়। উত্তেজনা তখন থেকেই। বিশেষ করে চূড়াচাঁদপুর, কাংপোকপি প্রভৃতি কুকি সম্প্রদায় অধিক বসবাস এলাকায়। এন বীরেন সিং সরকার অনেকের বাড়ি ভেঙে দেয়। অবৈধ পপি চাষ বন্ধ করার কথা বলেন। অনেক গির্জা ভেঙে দেওয়া হয়। সেগুলি নাকি অবৈধ। জোর করে নির্মিত। কোর্টের অনুমতিতে ভাঙা হয়েছে বলে সরকার দাবি করেন। এছাড়াও সেখানে মায়ানমার থেকে অভিবাসী কুকিদের তাড়াতে এই ব্যবস্থা বলে উল্লেখ করেন। পাহাড়ের কুকি উপজাতিরা অভিযোগ করে যে, সরকার সংরক্ষিত জমি উদ্ধার, অবৈধ পপি চাষ বন্ধ, অভিবাসনরোধ প্রভৃতির অজুহাতে মূলত উপজাতিদের পাহাড় থেকে উৎখাত করতে চাইছে। যা বেআইনী, অগণতান্ত্রিক। রাজ্য সরকার এই কাজ করতে পারেন না। তাদের মধ্যে সরকারের প্রতি বিদ্বেষ জমতে থাকে। সরকারের সাথে বৈরি মনোভাব দেখা দেয়।
ইতিমধ্যে ২৭ মার্চ ২০২৩ এ মেইতেইদের আবেদনের প্রেক্ষিতে, মণিপুর হাইকোর্টের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এম. ভি. মুরলীধরন মেইতেইদের তপশিলি উপজাতিভুক্ত করা যায় কিনা তার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়।
পাশাপাশি কেন্দ্রের সাথে আলোচনা করতে বলে। এই ঘোষণার পরই ৩রা মে ২০২৩ এ জনজাতি ছাত্র সংগঠন অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর (এটিএসইউএম) চুঁড়াচাঁদপুরে বিক্ষোভ কর্মসূচির আহ্বান করে। এই বিক্ষোভ ছিল মূলত মেইতেই জাতির, জনজাতির (সিডিউল ট্রাইব) দাবীর বিপক্ষে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে কুকি উপজাতির সংখ্যাই বেশি ছিল। তারা প্রায় ৬০ হাজারের কাছাকাছি। বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ঘিরেই মেইতেই জাতি ও কুকি উপজাতিদের মধ্যে বিবাদ ও সহিংসার ছড়িয়ে পড়ে। সেই আগুন সমগ্র রাজ্যে জ্বলতে থাকে। বিশেষ করে ইম্ফল, বিষ্ণপুর, চূড়াচাঁদপুর, কাংপোকপি প্রভৃতি ক্ষেত্রে। ইম্ফল উপত্যকায় মেইতেই অধ্যুষিত এলাকা থেকে কুকিরা এবং পাহাড়ের কুকি অধ্যুষিত এলাকা থেকে মেইতেইরা পালাতে থাকে। তারা নিজ সম্প্রদায়ে আধিক্য এলাকায় ও বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। রাজ্যের বীরেন সিং এর সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে সেখানে মিলিটারি নামানো হয়। উপদ্রুত এলাকাতে কারফিউ জারি করা হয়। শুট এ্যাণ্ড সাইট এর অর্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু আজ ২৫ জুলাই ২০২৩ অবধি হিংসার আগুন জ্বলচ্ছে।
ভাইরাল নগ্ন ভিডিও প্রকাশ
২৬ জুলাই ২০২৩ এ মণিপুরে ইন্টারনেট সাময়িক সময়ের জন্য খোলা হলে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, জনতা ভিড় দুই কুকি মহিলাকে নগ্ন করে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে জনতার মধ্যে অনেকেই এক মহিলা নগ্ন শরীরের বিভিন্ন অংশ খামছে দিচ্ছে। ভিকটিম মহিলা দুটির একজন ১৯-২০ বছরের, অন্যজন ৪০ বছরের। তাদের ফাঁকা মাঠে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আরো জানো যায়, তাদেরকে গণধর্ষণ করা হয় প্রকাশ্যেই।
এই ঘটনাটি ঘটেছিল, ৪ মে ২০২৩ এ। সহিংসতা ছড়ানোর ঠিক পরেরদিন। একটি গুজব ছড়িয়ে ছিল যে, মেইতেই একজন নার্সকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। তার রক্ত মাখা ছবিও ঘুরছিল। পরে মণিপুর পুলিশ জানায় যে, এটি একটি ফেক নিউজ। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে গেছে। মেইতেই লোকেরা প্রতিহিংসায় উক্ত দুই মহিলাকে প্রকাশে নগ্ন করে রাস্তায় ঘুরিয়ে ধর্ষণ করেছে।
১৮ই মে ২০২৩ থানায় এফআইআর করা হয়। সেখানে বলা হয় যে, তুলনায় কম বয়সী মেয়েটিকে প্রকাশ্য দিবালোকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে গণধর্ষণ করা হয়েছিল।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ঘটনার দিন কাংপোকপি জেলায় তাদের গ্রাম যখন জ্বালিয়ে দেয়, তখন প্রাণে বাঁচতে তারা পরিবারের কয়েকজন মিলে কাছের জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পথে থৌবাল জেলার একটি পুলিশ ভ্যান তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে নেয়। তবে পুলিশ যখন তাদের থানায় নিয়ে যাচ্ছিল, তখন থানা থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে একদল উত্তেজিত জনতা তাদের ঘিরে ধরে। এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, “ওই ক্ষুব্ধ জনতা তাদের পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নেয়।”
কিন্তু ভিক্টিম দু’জন নারীর একজন ভিডিও ভাইরাল হবার পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে জানিয়েছেন, “পুলিশ আসলে হামলাকারীদের সঙ্গেই ছিল। ওরা বাড়ির বেশ কাছেই প্রথমে আমাদের গাড়িতে তুলে নেয়, তারপর গ্রামের একটু বাইরে গিয়েই রাস্তায় ছেড়ে দেয়। পুলিশই ওই জনতার হাতে আমাদের তুলে দিয়েছিল।”
কিন্তু ভিডিও প্রকাশ্যে আসার আগে কোনো ব্যক্তিকেই এই বর্বর-বিভৎস নারকীয় ধর্ষণকাণ্ডের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়নি। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, এই ঘট্না দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। এটা মারাত্মক সংবিধান লংঙ্ঘনের কাজ। সরকার কোনো পদক্ষেপ না করলে আমরাই ( কোর্ট) পদক্ষেপ করবে। সরকারের থেকে রিপোর্ট চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
ঘটনার ৭৮-৭৯ দিন বাদে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের পর প্রধান মন্ত্রী মণিপুর হিংসা শুরুর পর প্রথম মুখ খোলেন। ১৪০ কোটি জনতার লজ্জা বলে উল্লেখ করেন। তিনি পাশাপাশি অন্য এমন দুটি রাজ্যের নাম করেন যেখানে বিরোধী কংগ্রেস দলের সরকার রয়েছে। তিনি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের প্রচারে যাচ্ছেন। গত ৮০ দিনে দেশের বাইরে ৫-৭ টি বিদেশ ভ্রমণ করতে পারলেও তিনি মণিপুর যেতে পারেননি।
এন বীরের সিং এর সরকার ঘটনার সাথে যুক্ত ( বলা হচ্ছে মূল অভিযুক্ত) কে গ্রেপ্তার করেছে। পরে আরো ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিক্ষোভের নেপথ্যে?
কেন এই বিক্ষোভ? তা জানতে হলে মণিপুরের অধিবাসীদের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক অবস্থা জানা প্রয়োজন। মণিপুরের ভৌগোলিক অবস্থানে দুটি ভাগ রয়েছে। হিল এরিয়া ও উপত্যাকা অঞ্চল। রাজ্যের ১০ শতাংশ অঞ্চল উপত্যাকা। যা ইম্ফল ভ্যালি নামে পরিচিত। রাজ্যের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। তার চারিপাশের হিল এলাকা ৯০ শতাংশ। কিন্তু জনবসতির প্রায় ৬০ শতাংশ ইম্ফল ভ্যালিতে বসবাস করে। বাকি ৪০ শতাংশ হিল এরিয়ায়। এই উপত্যাকায় যাবতীয় সুযোগ সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। যেমন- বিশুদ্ধ পানীয় জল, শিল্প, পর্যটন শিল্প প্রভৃতি।
মণিপুরের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মেইতেই গোষ্ঠী এবং ৪০ শতাংশ নাগা, কুকিসহ প্রায় ৩৪ টি উপজাতি। কিন্তু ভ্যালিতে বসবাসকারী নাগরিকদের প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ মেইতেই, হিল অধিবাসীদের প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ নাগাও কুকি উপজাতি গোষ্ঠীভুক্ত। রাজ্যের অর্থনীতি, রাজনীতি, ব্যাবসা, বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রেই মেইতেইরা প্রভাবশালী ও শিক্ষিত। অর্থাৎ রাজনৈতিক পাওয়ার মেইতেই গোষ্ঠীর বেশি। মোট ৬০ জন বিধায়কের মধ্যে ৪০ জন মেইতেই সম্প্রদায়ের। ২০ জন নাগা ও কুকি উপজাতিদের। বর্তমানে মেইতেইরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কুকি ও নাগারা খ্রিস্টান ধর্মানুসারী।
বর্তমান জাতিগত সহিংসতা ও অবিশ্বাসকে জানতে হলে পূর্বের ইতিহাস জানা প্রয়োজন। প্রায় হাজার বছর আগে মেইতেই সম্প্রদায় মায়ানমার থেকে ইম্ফল ভ্যালিতে মাইগ্রেটেড হয়ে আসে। তখন তারা ইণ্ডিজিনাস রিলিজিন এর মধ্যেই ছিল। কিন্তু ১৭৩০ এর সময় মণিপুরের রাজা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করলে মেইতেইরাও হিন্দু ধর্মে পরিবর্তিত হয়। তারা নিজেদেরকে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় বলে পরিচয় দেয়। নামের আগে Kh উল্লেখ করে, ক্ষত্রিয় বোঝাতে। ১৮০০ শতকে বার্মা মণিপুরে আক্রমণ করে। ১৮২৪-২৬ সালে ইঙ্গ-বার্মা যুদ্ধে বার্মা পরাজিত হয়। ব্রিটিশরা মণিপুর অধিকার করে। মণিপুরের আর্থিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে। ১৮৩৫ সালে ইংরেজরা সেখানে তাদের তাবেদারদের ক্ষমতায় বসিয়ে ছিল। পরবর্তীতে ১৮৯১ সালে মণিপুরকে প্রিন্সলি স্টেট বলে ঘোষণা করেন। ব্রিটিশরা রাজার ক্ষমতা দিয়েছিল মেইতেইদেরকে। ব্রিটিরা সেখানেও Divide and Rule policy গ্রহণ করে। মেইতেইদের ভালো জমি, ক্ষমতা প্রদান করে। নাগা, কুকি সহ অন্যান্যদের দমন করে। সংস্কৃতির বিকাশে বাধা দেয়।
স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৯৪৯ সালে রাজা বোধচন্দ্র সিং একটি যুক্তি স্বাক্ষর করেন। ভারতের কেন্দ্রশাসিত রাজ্য হিসাবে গণ্য হয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে স্বাধীন রাজ্য হিসাবে মণিপুর গঠিত হয়।
বর্তমান সমস্যার চিত্র হল মেইতেই সম্প্রদায় ভ্যালিতে যেমন প্রভাব আছে, তেমনি তারা হিল এরিয়াতেও প্রভাব বিস্তার করতে চায়। তারাও যাতে করে দেশের সর্বত্র বসবাস করতে পারে তার দাবী জানাতে থাকে। উপজাতি তথা জনজাতির অধিকার আবেদন করে। বিগত কয়েক বছরে মেইতেই সম্প্রদায় ৬০ শতাংশ থেকে ৪৪ শতাংশে নেমে এসেছে বলে দাবী করে। তাদের জমি কুকিরা কিনে নিচ্ছে। তারা সমস্যায় পড়ছে। তারা বাইরে জমি কিনতে পারছেনা। কারণ তাদের জনজাতি তকমা নেই।
সরকারের ভূমিকা
কেন্দ্র ও মণিপুর রাজ্য ডবল ইঞ্জিন সরকার। এন বীরেন সিং মেইতেই জাতির লোক। ৩ মে থেকে প্রায় ৮০ দিন ধরে চলা এই জাতিগত হিংসাকে রুখতে সরকারের বক্তব্য হল তারা মিলিটারি নামিয়েছে। প্রতিদিনের তথ্য কেন্দ্রকে জানিয়েছে। কেন্দ্রের সাথে আলোচনা করেছে। শান্তি-কমিটি করেছে। মন্ত্রীসভায় আলোচনা করা হয়েছে। চেক পোস্ট করেছ। পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করেছে। যাতে করে হিংসা না বাড়ে। এই সকল কাজ রাজ্য সরকার করেছে বলে দাবী করছে।
কেন্দ্র ২৬শে জুলাই এর পর থেকে কেন্দ্র বলছে বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হয়েছে। ত্রাণ শিবির খোলা, নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। যাতে নতুন করে আর হিংসা না ছড়ায় তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে।
হিংসার বর্তমান চিত্র
বর্তমানে কুকি ও মেইতেই জাতি ইম্ফল ভ্যালি ও চূড়াচাঁদপুর পাহাড়- এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কুকি এলাকায় মেইতেইরা এবং মেইতেই এলাকায় কুকিরা যেতে পারেনা। মেইতেইরা এনআরসি চাইছে। তাদের সাথে রাজ্য সরকারের পুলিশ মিলে কুকিদের আক্রমণ করছে। মেইতেইদের হাতে অস্ত্র ও অস্ত্রাগার একরকম তুলে দিয়েছে বীরেন সিং সরকার। আবার অসম রাইফেলস পুলিশের একটা অংশ কুকিদের সাথে মিলে আছে। মেইতেই এলাকায় তারা ত্রাণ শিবির খুলেছে। কুকিরাও তাদের এলাকাতে ত্রাণ শিবির খুলেছে। ত্রাণ শিবিরগুলিতে সরকারিভাবে খাবার যথেষ্ট দেওয়া হচ্ছেনা।
সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ
দুই কুকি মহিলাকে নগ্ন করে প্যারেড করানোর ভাইরাল ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর দেশের সর্বোচ্চ আদালত মণিপুরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন যে, মণিপুরের সাংবিধানিক ব্যবস্থা অবস্থা ভেঙে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। দেশের রাজনীতিকরা অন্য রাজ্যের ঘটনার সাথে মণিপুরের ঘটনাকে তুলনা করে ছোটো করতে চায়ছে। ৭ ই আগষ্ট সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে। বিশেষ করে ভাইরাল ভিডিও ও দায়ের হওয়া ৬০০০ মামলা নিয়ে। কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন গীতা মিত্তল, জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, বোম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি শালিনী ফানসালকার জোশী এবং দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আশা মেনন প্রমুখকে নিয়ে এই সমন্বয়ে কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা ত্রাণ ও পুর্নবাসনের দিকটিও পর্যবেক্ষণ করবেন।
পার্লামেন্টের অধিবেশনে মণিপুর নিয়ে আলোচনা
বিরোধী দলগুলি মণিপুর নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনার জন্য চিৎকার করলেও সরকার পক্ষ কান দিচ্ছে না। নো কনফিডেন্স মোশনে রাহুল গান্ধী মণিপুর নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মণিপুরকে হত্যা করছে। দেশকে হত্যা করছে। আমার মাকে হত্যা করা হচ্ছে। সেনাদের কাজে লাগানো হচ্ছেনা। সরকার চাইছে যে, দাঙ্গা-সহিংসতা চলুক। সেনা চাইলে দু-দিনে তা বন্ধ করে দিতে পারে। আরোও অন্যান্য বিরোধী দলের সদস্যরাও মণিপুরে কেন জ্বলছে, অন্য রাজ্যের দাঙ্গা-হিংসার থেকে যে এটা আলাদা তা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী তার জবাবি ভাষণে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। কিন্তু মণিপুর নিয়ে ২-৩ মিনিট বলে ছেড়ে দেন। মণিপুরে আগুন নেভানোর কোনো আভাস তার বক্তব্য থেকে পাওয়া যায়নি।
আমাদের দৃষ্টিপাত
১। মণিপুর জনজাতি ও পাহাড়ী এলাকা। সেখানে অন্য রাজ্যের মতো কর্পোরেটি থাবা বসানো যায়নি। তা কীভাবে করা যায়? তা নিয়ে সরকার খুবই চিন্তিত ছিল। মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে এই জাতিদাঙ্গা লাগিয়ে যাতে করে তাদের প্রবেশ নিরঙ্কুশ করা যায় তারই ব্যবস্থা।
২। পাহাড়ের নীচে যে সকল খনিজ পদার্থ রয়েছে, তা জনজাতিদের বসবাসের এলাকা। তা কর্পোরেটদের হাতে তুলতে গেলে তাদের উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। অতএব জাতিদাঙ্গা লাগানোর উসকানি দীর্ঘ কয়েকমাস থেকে চলছিল। পাহাড়ের অধিবাসীদের উপর নানান ভাবে রাজ্য সরকার অত্যাচার করতে শুরু করে। কিন্তু তাতে সরকার চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছিল। তাই দুই জাতির মধ্যে যে ফাটল ছিল সেটাকে খুঁচিয়ে তাদের এই নারকীয় যুদ্ধে নামিয়েছে। যাতে মনে হয়, মেইতেইদের যাবতীয় অভাব-অভিযোগের জন্য কুকিরা দায়ী। কুকিদের অধিকার বঞ্চনার জন্য মেইতেইরা দায়ী। খেলাটা জমিয়েছে ভালো। পুরোনো সেই ব্রিটিশ বেনিয়ার ডিভাইড এণ্ড রুল পলিসি।
৩। ইতিমধ্যে জানা যাচ্ছে যে কিছু কোম্পানিকে পাহাড়ের এলাকায় খনিজ সম্পদের উত্তোলনের বরাত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা যেতে পারছিল না। এই দাঙ্গার আগুন নেভানোর নামে তারা সহজেই প্রবেশ করতে পারবে।
৪। মেইতেইরা সংখ্যাগুরু। কুকিসহ অন্যান্যরা সংখ্যালঘু। মেইতেইদের ভোটটাও পাওয়া যাবে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও যাতে এর মুনাফা লাভ করা যায়।
৫। ড্রাগ মাফিয়া যারা রয়েছে, তারাও তাদের আধিপত্যের পরীক্ষা করে নিচ্ছে। মেইতেই ড্রাগ মাফিয়া, কুকি ড্রাগ মাফিয়া, বিজেপি ড্রাগ মাফিয়া প্রভৃতিদের পরস্পরের এলাকা দখলের এই দাঙ্গার আগুন আরো বেশি সংক্রামিত হয়েছে- হচ্ছে।
- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -
সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন
গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১
পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক
নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার
সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ
RNI Ref. Number: 1343240
সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮
azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com