ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

আইন সভায় নারী সংরক্ষণ বিল ২০২৩ নারীর অধিকারের প্রশ্ন, নাকি নয়া-ভোট ব্যাঙ্ক পলিটিক্স?

অতীতে বহুবার এই বিল সংসদে পেশ করবার প্রয়াস হয়েছে এবং নানাবিধ হট্টগোলের  মধ্যে দিয়ে তা পেছনের সারিতে চলেও গেছে। অন্তত এ-সংক্রান্ত অতীত ঘাঁটলে ৩০ বছরের ইতিহাস পাওয়া যাবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী থেকে শুরু করে দেবে গৌড়া, নরসিংহ রাও, অটল বিহারি বাজপেয়ী, মনমোহন সিং  এবং সবশেষে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি! ১৯৮৭ সাল থেকে ২০২৩!   

কংগ্রেসের নারী সংরক্ষণ বিলটি উত্থাপন করার প্রশ্নটি এবং ওবিসি সংরক্ষণ প্রসঙ্গে তার বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন আঞ্চলিক সহযোগী দলের অসহযোগিতার পরিণামে বিলটি অন্ধকারে চলে যাওয়ার ব্যাপারটা বোঝা যায়। কিন্তু বিরোধী থাকাকালীন ভারতীয় জনতা পার্টি বিভিন্ন সময়ে এই বিলের বিরোধিতা করলেও আজ এত ঢক্কানিনাদ সহযোগে তা পেশ করবার কারণ কী?  

ভারতীয় জনতা পার্টি আদ্যন্ত একটি রিলিজিয়াস সুপ্রাম্যাসিস্ট (Supremacist) পার্টি! পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের যেকোনো রিলিজিয়াস সুপ্রাম্যাসিস্ট (Supremacist) পার্টি কখনোই নারীকে তার যোগ্য অধিকার দিতে চায় না! তথাকথিত ইসলাম তথাকথিত হিন্দু  তথাকথিত ক্রিশ্চিয়ান বা  যে-কোনো অপরাপর রিলিজিয়ান থেকেই তা আসুক না কেন! ভারতীয় জনতা পার্টির মতো আদ্যন্ত একটি ব্রাহ্মণ্য সুপ্রাম্যাসিস্ট পার্টি নারীর অধিকার, ক্ষমতার বাস্তবায়নে  দায়িত্ব নেবে এটাতো ভাবা যায় না! এটা তার জীবন বা রাষ্ট্র ভাবনার  সাথে যায় না। এটা তার নেচারের সাথেও যায় না! তাহলে কেন এই বিল উত্থাপন? যদিও কংগ্রেস সমেত সবকটি বিরোধীদল এই বিল যে আদৌ মুশিক প্রসব করবে একথা খুব জরের সঙ্গে বলছে কারণ এই বিল আইনে পরিণত হবার পরে কত দিনের মধ্যে তা কার্যকর হবে তার কোন টাইম ফ্রেম নির্ধারণ করা হয়নি! বলা হয়েছে বিলটি পাস হবার পর, জনগণনা হবার প্‌র, ডি লিমিটেশন হবার পর তা চালু হতে পারে! এখানেই প্রশ্ন উঠছে আদৌ এই বিল বাস্তবায়ন করা হবে কিনা। যদি বাস্তবায়ন করবার  ইচ্ছে শাসক দলের থেকে থাকতো তাহলে তার সুস্পষ্ট রুপরেখা পার্লামেন্টের সামনে উত্থাপিত হতো। কিন্তু তা উত্থাপিত হয়নি । এতেই সন্দেহ জাগে!

সেই প্রশ্নে যাওয়ার আগে নারী সংরক্ষণ বিলের ব্যাকগ্রাউন্ডে কী আছে সেটি দু-এক কথায় বলে দেওয়া যাক। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স অনুযায়ী ভারতের অবস্থান ১২৬। শ্রম শক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাংলাদেশের থেকেও কম। ২০২২ সালে দেশে ক্রাইম এগেনস্ট উইমেন রেজিস্টার্ড হয়েছে ৩১ হাজার। নারীদের আইন রচনায় অংশগ্রহণ করাবার ক্ষেত্রে ১৮৫টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১৪১। শতাংশ হিসেবে ১৪ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশ ২০.৯ শতাংশ। পাকিস্তান ১৯ শতাংশ, নেপাল ৫৩ শতাংশ! অর্থাৎ পার্লামেন্টে নারী সংরক্ষণ বিল কতটা গুরুত্বপূর্ণ উপরোক্ত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে।

আমাদের দেশসহ সারা পৃথিবীতে একটি জিনিস লক্ষ্যনীয় যে সম্প্রতি নানান ধরনের সরকারি স্কিম বা প্রকল্প গুলির মধ্যে নারী কেন্দ্রিক প্রকল্প বহু সংখ্যক। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের উজ্জ্বলা যোজনা সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের জনকল্যাণ মুখী প্রকল্পগুলির দিকে তাকালে তা পরিস্কার হয়ে যায়।  স্যাম্পল হিসেবে রাজস্থান পাঞ্জাব পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যগুলো দেখলেই বোঝা যায়। প্রতিটি ক্ষেত্রে সমকালীন দল জনকল্যাণকারী প্রকল্পগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নারী কেন্দ্রিক প্রকল্পগুলিকে স্থান দিয়েছে।  এ কাজ কেন তারা করছে?

আমরা এতদিন নানান আলোচনায় ভোটব্যাঙ্ক শব্দটির ব্যবহার বহুলভাবে প্রচারিত হতে দেখেছি। মুসলিম ভোট ব্যাংক হিন্দু ভোটব্যাংক দলিত ভোট ব্যাংক ওবিসি ভোট ব্যাংক নানান ধরনের ভোট ব্যাংকের কথা রাষ্ট্রীয় জীবনের আলোচনায় আলোচকরা বারবার এনেছেন। কংগ্রেস সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলি রচনা ও রূপায়ন করেছে সেই ভোট ব্যাংকের কথা মাথায় রেখে। ২০১৩ সালের পার্লামেন্টারি ইলেকশনে মহিলা ভোটের পার্সেন্টেজ ছিল ৪৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে সেই শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮.১৩ শতাংশ। অতঃপর নারী ভোট ব্যাংক বটে! আগামী পার্লামেন্টারি ইলেকশনে সেই ভোট ব্যাংকের দখল ভারতীয় জনতা পার্টি কি নিতে চায়না? অবশ্যই চায় এবং সেই চাওয়া থেকেই নারী সংরক্ষণ বিল ২০২৩ পেশ করবার ঢক্কানিনাদ। তা বাস্তবায়িত হোক বা না হোক! আসল কথা হল  আমরা নারীকে তার অধিকার দিতে চাইছি, সংরক্ষণ বিল আইনে পরিণত করতে চাইছি—এই প্রচারটা যাতে বাজার মাত করে! ২০২৪ সালের ইলেকশনে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটের অধিকারী যে ব্যাংক অর্থাৎ নারীকে নিজ পক্ষে না আনলে কি সেই যুদ্ধে জেতা যাবে?  

দ্বিতীয়তঃ ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স কেন্দ্রিক। India Alance এ এখন যে দলগুলি সংযুক্ত হয়েছে অতীতে নারী সংরক্ষণ বিল এর প্রসঙ্গে তাদের অনেকের বিরোধ ছিল। অনেক ক্ষেত্রে এটা দেখাও গেছিল যে এদের বিরোধিতার কারণেই এই বিল সংসদের উচ্চ কক্ষে উত্থাপনই করা হয়নি। নির্বাচনের প্রাক্কালে এই বিল  উত্থাপন করার মধ্যে দিয়ে ইন্ডিয়া এলায়েন্স এর দলগুলির মধ্যে একটি ঘোঁট পরিস্থিতি সংক্রামিত করবারও একটা লক্ষ্য এই নারী সংরক্ষণ বিল ২০২৩ হতে পারে! যাতে ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্সের ইউনিটি ভেঙে যায়!   

মনে রাখা দরকার, রক্ষণকামী ক্ষমতাচক্র কখনোই নারীকে যৌন ভোগের অতিরিক্ত কিছু হিসেবে দেখেনা, দেখতে চায় না। সেজন্যই বস্তুগতভাবে প্রণীত কোন ইজম এর নাম করেও আজও যারা সেন্টিমেন্টের সংক্রমণ করে আর  সামাজিক সম্পদ ধন রূপে আত্মসাৎ করবার লাইসেন্স পেয়ে যায়, তারা কোনো অবস্থাতেই নারী পুরুষের মিলিত সংগ্রামকে আর্থ সমাজে  রূপ পেতে দিতে চায় না।  

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::