সম্পাদক
ক্ষমতার রূপ সবকালে সবযুগে দুই রকম হতে পারে, ১।--রক্ষণকামী ক্ষমতা, ২।--বস্তুগত ক্ষমতা। রক্ষনকামী ক্ষমতা আর্থসমাজের বিকাশ রুদ্ধ করে। এটা সে করে তার রক্ষণ বৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য। এবং এই অপকান্ডের মাধ্যমে সে আর্থ সমাজ মানবতার বিকাশ ব্যাহত করে। আর্থসমাজ মানবতার বিকাশ সব সময় শ্রমমূল্য তথা উৎপাদন নির্ভর। রক্ষণ বৃত্তি এই উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত শ্রমমূল্যের সিংহভাগ কুক্ষি করিয়ে দেয় ব্যক্তির পকেটে পকেটে। কর্পোরেটের পকেটে পকেটে। বহুজাতিকের পকেটে পকেটে। পরিণামে শ্রমশিল মানুষ মূল্য বঞ্চিত হয়। তার মানবাধিকার লাঞ্ছিত হয়। রক্ষণকামী ক্ষমতা চক্র এই ব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখবার জন্য দাপটকামী হয়। রাষ্ট্রশক্তিকে কাজে লাগায়। রাষ্ট্র শক্তির যন্ত্রবৎ ব্যবহারের মাধ্যমে মানবতার আন্দোলনকে, মানবতার কণ্ঠস্বরকে দমন করতে চায়। এই দেখেছি ইতিহাস। তা সামন্ত সমাজের ইতিহাস হোক, পুঁজিতন্ত্রের ইতিহাস হোক, ঔপনিবেশিক বা নয়া ঔপনিবেশিক ইতিহাস হোক! আরও একটু অগ্রসর হয়ে সেমি-হিটলারি তথাকথিত সমাজতন্ত্রের ইতিহাস-ই হোক না কেন?
তথাকথিত গণতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোই রক্ষণকামিতা তার দাপট নিয়ম তান্ত্রিক ভাবে সংঘটিত করে! আপাতদৃষ্টিতে সংবিধান ও তার নৈতিকতাকে লংঘন সে করেনা। এরও নির্দিষ্ট কারণ আছে। গণতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে কোন রাজনৈতিক দল সেই ক্ষমতাকে প্রতিনিধিত্ব করছে সেটা দেখবার বিষয়। সেই দল যদি মধ্যপন্থী রক্ষণকামিতার দিকে হেলে থাকা দল হয়, কিন্তু চরমভাবে সে এখন রক্ষণকামিতাকে বাড়োবা দিতেও চায়না তাহলে তার স্বরূপ এক রকম । সেক্ষেত্রে তখন ক্ষমতার রূপ অনেকটা মধ্যপন্থা ভিত্তিক। বিশ্বে গণতান্ত্রিক দেশ সমূহে রক্ষনকামিতার চেহেরা এমনই।
কিন্তু রক্ষণকামী ক্ষমতা এই চেহেরায় রাষ্ট্রপাট তথা আর্থসমাজ সুদীর্ঘকাল ধরে চালাতে পারেনা। মধ্যপন্থী ব্যবস্থাপনায় আর্থসমাজ মানবতার অধিকারহীনতার প্রতিক্রিয়ার পরিণামে সেই আর্থসমাজে হিটলারের মত চণ্ড রক্ষনকামের জন্ম হয়ে যেতে পারে। জন্ম হতে পারে ফ্যাসি-নাৎসি পার্টির! তথাকথিত উগ্র জাতীয়তাবাদী সেন্টিমেন্ট উসকে নেশনকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিতে পারে! এই পার্টির এবং তার উগ্র নেতৃত্বের ক্ষমতাকামিতা এমন পর্যায়ে যেতে পারে যেখানে দেশের অভ্যন্তরে সে কৃত্রিম শত্রু খাড়া করতে পারে। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমকালীন জার্মানি। এই জার্মানিতে হিটলারের পার্টির উদ্ভবের অবহিত পূর্ব এবং পরবর্তী ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে এই ঘটনা পরিষ্কার হয়ে যায়। হিটলার জার্মানিতে ইহুদি এথনিক মাইনোরিটিকে জার্মান জাতির সমস্ত দঃখ দুর্দশার মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করে এবং দেশ থেকে তাদের সমূলে উৎপাটন করবার চক্রান্ত করে। হিটলারের এই চিন্তা ও তার দ্বারা জার্মানদের সামূহিক মগজ ধোলাই একটি জাতির জীবনে কী নরক নামিয়ে আনতে পারে তা ইতিহাসের ছাত্র মাত্রই জানে। অবশ্য সাভারকার বা গোলওয়ালকার বা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মত ছাত্র হলে হয়না, সুভাস চন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় প্রমুখের মত ছাত্র হতে হয়! যাইহোক, এডলফ হিটলারের এই চিন্তা এবং তার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জার্মান জাতি সারা পৃথিবীর কাছে আজও কুখ্যাত এবং যতদিন মানবজাতির ইতিহাস জীবন্ত থাকবে এই কুখ্যাতি জার্মানিকে বয়ে বেড়াতে হবে। আর সেটি মানবজাতির কাছে শিক্ষনীয় এক সতর্ককারী নৃশংসতা হিসেবেই চিত্রিত থকাবে।
ভারতবর্ষে জাতীয় কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন অর্থাৎ ১৯৪৭ থেকে দীর্ঘ ৫০ বছরের ক্ষমতা-কাল রক্ষণকামিতার মধ্যপন্থী পর্যায়ে হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এই পর্যায়ে এই পার্টি সাংবিধানিক অধিকার ব্যবহার করে নানান পদ্ধতিতে রক্ষনকামিতাকে ধুঁয়ো দিয়ে এসেছে। পুঁজির হাতে শ্রমমূল্যের অনধিকার তুলে দিতে গিয়ে মানবাধিকার ভুলন্ঠিত করেছে। রক্ষণকামী জাতপাত দীর্ণ আর্থসমাজ আরো দীর্ণ হয়েছে। বস্তুগত ক্ষমতার প্রকরণ-পদ্ধতি প্রয়োগ হয়নি। রক্ষণকামী ক্ষমতা চক্র বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি-দৃষ্টিকোণ সমন্বি সচেতন নাগরিক গড়ে তুলতে দেয়নি।
রাজ্যে রাজ্যে সামন্ত মেন্টালিটি আর্থসমাজকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। ক্রমশ আর্থিক কার্যকলাপের বৃদ্ধির সমানুপাতে শ্রমিক-কৃষকদের সংখ্যা বেড়েছে। মহানগরীগুলি গড়ে উঠেছে। সামন্ত পুঁজিরহাত থেকে ব্যাটন ক্রমশ শিল্প পুঁজির হাতে স্থানান্তরিত হয়েছে। কৃষি উৎপাদনের প্রধান ক্ষেত্র থেকে অপ্রধান ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। স্থিতিশীল উৎপাদন তথা উন্নয়ন আর্থসামাজিক স্থিতিশীলতা স্থিতিশীলতা সৃষ্টিকরতে পারেনি। ভারতীয় সমাজের অভ্যন্তরস্থ জাত ব্যবস্থা এবং অন্তঃসলিলা পর-ধারণাবিদ্বেষ একটা সাম্প্রদায়িকতার চোরাস্রোত রূপে সব সময়ের জন্য থেকে গেছে। বস্তুভিত্তিক রাজনীতি চর্চার মধ্যে দিয়ে জাত বর্ণ এবং ধর্ম বিভাজনের মানসিকতা নাগরিক জীবন থেকে দূর করা যায়নি। করা যায়নি নয়, রক্ষণকামী ক্ষমতাচক্র করতে দেয়নি।
পরিণামে ২০১৪-২০২৪ সময়কালে অপর এক উগ্র-জাতিয়তাবাদী কেন্দ্রীয় ক্ষমতা-চক্র যে রূপে, যে ধারে, যে ভারে, যে অবয়বে ক্ষমতা দখজল করেছে তা স্মরণ করিয়ে দেয় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ পূর্ব জার্মান ইতিহাস। মনে রাখা দরকার, বর্তমান কেন্দ্রীয় ক্ষমতার ধারক ও বাহকদের পূর্বসূরীরা অতীতে সেই জার্মান জাত্যাভিমান এক বিরাট প্রশংসার ব্যাপার হিসেবে চিহ্নত হয়েছে। তারা সরাসরি জাতি বিদ্বেষকে সমর্থন করেছে। তাদেরই কৌরবী বংশ ডালপালা মেলতে মেলতে আজ হিটলারি অন্ধত্বের সংক্রমণে দেশকে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে! এই রক্ষণকামী ক্ষমতা চক্রকে পরাজিত করে বস্তুগত পান্ডবী ক্ষমতার বিজয় অর্জনের জন্য কতকাল অপেক্ষা করবে মানবতার আমিত্বচেতনা !
- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -
সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন
গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১
পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক
নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার
সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ
RNI Ref. Number: 1343240
সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮
azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com